রাজ্যের শিল্পপতির বিরুদ্ধে সাইবার প্রতারণার অভিযোগে তল্লাশি, পুলিশের হাতে চাঞ্চল্যকর তথ্য
রাজ্যের ইতিহাসে অন্যতম বড় সাইবার জালিয়াতি মামলা। ৩১৭ কোটি টাকার প্রতারণা, আর সেই ঘটনায় এবার নাম জড়াল শিল্পপতি পবন রুইয়ার (Pawan Ruia)। রাজ্য পুলিশের সাইবার উইংয়ের দাবি, এই বিপুল অঙ্কের টাকার একটি বড় অংশ প্রায় ১৭০ কোটি পাচার হয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে বিদেশে।পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জে পবন রুইয়ার বাড়ি, পার্ক সার্কাসের সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউয়ে অফিস ও পার্ক স্ট্রিটের আরেক অফিস তিন জায়গাতেই টানা তল্লাশি চালিয়েছে সাইবার উইং। সেখানে থেকে উদ্ধার হয়েছে ৬টি মোবাইল ফোন, একটি ম্যাকবুক, ১০টি ল্যাপটপ, একাধিক সার্ভার, হার্ড ডিস্ক, সাতটি ওয়াইফাই রাউটার, প্রচুর প্যান কার্ড, চেকবই, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নথি, ১২টি পেন ড্রাইভ এবং বেশ কয়েকটি সন্দেহজনক কোম্পানির কাগজপত্র। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধার হয়েছে বিদেশি সিমকার্ড, যার একটি বড় অংশ দুবাই-সহ অন্যান্য দেশের।তদন্তকারীদের অনুমান, এই সিমকার্ডগুলির সাহায্যে বিদেশে যোগাযোগ রক্ষা করা হত, আর তার মাধ্যমেই টাকা পাচার হতো ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে। সাইবার উইং এখন খতিয়ে দেখছে এই বিদেশি সংযোগ কতটা গভীর এবং ঠিক কোন পথে টাকা গিয়েছে বিদেশে।ঘটনার সূত্রপাত গত বছরের এপ্রিল মাসে। নিউ টাউনের এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক আধিকারিক বিধাননগর কমিশনারেটের সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ করেন, হোয়াটসঅ্যাপে একটি গ্রুপে তাঁকে যোগ করিয়ে শেয়ারে বিনিয়োগের নামে প্রতারণা করা হয়েছে। প্রথমদিকে লাভ দেখিয়ে পরে তাঁকে দফায় দফায় টাকা লগ্নি করাতে থাকে প্রতারকরা। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে তিনি মোট ৯৩ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন, যা পরে পুরোপুরি উধাও হয়ে যায়।তদন্তে বেরিয়ে আসে ভয়ঙ্কর চিত্র শুধু ওই প্রবীণই নন, সারা দেশজুড়ে ১৩৭৯ জন মানুষের সঙ্গে একইভাবে প্রতারণা হয়েছে। মোট জালিয়াতির অঙ্ক ৩১৭ কোটি টাকা। সেই টাকা গিয়েছে ১৪৮টি ভুয়া বা শেল কোম্পানি-র মাধ্যমে, যার বেশিরভাগই এক ঠিকানায় নথিভুক্ত।১ নভেম্বর দিল্লি বিমানবন্দর থেকে দুবাই যাওয়ার সময় এক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে রাজ্যের সাইবার উইং। জেরায় উঠে আসে শিল্পপতি পবন রুইয়ার সংস্থার নাম অভিযোগ, ওই সংস্থার মাধ্যমেই প্রতারণার টাকা পাচার হয়েছে। তারপরই শুরু হয় পুলিশের একের পর এক তল্লাশি অভিযান।পুলিশ সূত্রে খবর, তল্লাশিতে প্রাপ্ত ডিভাইস ও ডকুমেন্টের ফরেনসিক বিশ্লেষণ চলছে। প্রাথমিকভাবে গোয়েন্দাদের ধারণা, এই সাইবার প্রতারণার টাকা দেশ ছাড়িয়ে গিয়েছে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে। পুরো চক্রটি আন্তর্জাতিক স্তরে কাজ করছিল।এই ঘটনায় শিল্পপতি রুইয়ার নাম জড়ানোয় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ব্যবসায়ী মহলে। তবে রুইয়া পক্ষ এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, যে সমস্ত তথ্য উদ্ধার হয়েছে, তাতে প্রাথমিকভাবে রুইয়া সংস্থার যোগসূত্র স্পষ্ট।

